নড়াইলের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় ৭ মাস ধরে ওষুধ নেই
নড়াইল জেলা প্রতিনিধি;
তৃণমূল স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে চালু রয়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। প্রাথমিক চিকিৎসা, পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবাসহ গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় এসব কেন্দ্রের ওপর নির্ভর করে গ্রামের অধিকাংশ নিম্নআয়ের মানুষ। তবে প্রায় ৭ মাস ধরে নড়াইলের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সংকটে খালি হাতে ফিরছেন এলাকাবাসী। এতে বিপাকে পড়েছেন সুবিধাভোগীরা।
রোববার (১৫ জুন) শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ ফাঁকা পড়ে আছে। একটি কক্ষে চুপচাপ বসে আছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার। কিছু সময় পর গায়ে সর্দি, কাশি-জ্বর নিয়ে ডাক্তারের নিকট আসেন আলোকদিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন। ডাক্তারকে তার সমস্যার বিষয়টি জানানোর পর হাতে ধরিয়ে দেন একটি ব্যবস্থাপত্র। ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বের হওয়ার সময় কথা হয় আনোয়ারের সঙ্গে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে এসেছিলাম ডাক্তার দেখায়ে ঔষধ নিতে। ডাক্তার এহন আমারে দেইয়া একটা ব্যবস্থাপত্র ধরায়ে দিছে। কোনো ওষুধ দেয়নি। আগে এখানে অনেক রোগী হতো। এখন ওষুধ না থাকায় কেউ আসে না। সারাদিন রোগী আসে দুই একজন । বাকি সব সময় ফাঁকা পড়ে থাকে।
আনোয়ারের মত অনেকেই ওষুধ না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরেছেন। বাদ পড়েনি মা ও শিশু রোগীরাও।
গোপীকান্ত পুর থেকে আসা সন্ধ্যা রানি বলেন, আমরা অনেক গরিব মানুষ। আমরা এখান থেকে ফ্রি ওষুধ পাইতাম। গত ৬ থেকে ৭ মাস ধরে ওষুধ নাই। আমাদের বাচ্চাদের অনেক সমস্যা হয়। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধ টা যেন সঠিক সময় পাই।
শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আলাউদ্দিন বলেন, আমাদের এখানে ২৫ রকমের ওষুধ বরাদ্দ ছিল। গত সাত থেকে ৮ মাস যাবৎ আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কোনো ওষুধ সরবরাহ নেই। কিছু পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী আছে যেটা দিয়ে পরিবার পরিকল্পনার কিছু সেবা চলছে। এখানে যে সব রোগী আসেন তার বেশিরভাগই শিশু ও নারী। তাদের জন্য আগে যে ওষুধ দিত তা দিয়ে আমরা তাদের সেবা দিতাম। কিন্তু ৭ থেকে ৮ মাস হলো ওষুধ সরবরাহ নেই। তাই রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। বিগত সময়ে ৫০ থেকে ৮০ জন রোগীর সেবা দিয়েছি। কিন্তু বর্তমানে ১৫ থেকে থেকে ২০ জনের বেশি রোগী আসে না।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, নড়াইলের তিনটি উপজেলায় ৪০টি ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং একটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে সিভিল সার্জন কর্তৃক ৭টি পরিচালিত হয়। বাকিগুলো পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ অধিদপ্তর থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে। সিভিল সার্জন কর্তৃক পরিচালিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর ভেতর সদরে তিনটি, লোহাগড়া তিনটি এবং কালিয়া একটি পরিচালিত হয়ে থাকে।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ পরিচালক আলিফ নূর ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোতে ওষুধের সংকট রয়েছে। ওষুধ সংকটের কারণে রোগী কমে যাচ্ছে। ওষুধ না পেলেও পরামর্শ সেবা তারা পেতে পারেন। ওষুধের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম চলছে। আশা করা যাচ্ছে খুবই দ্রুত সংকট কেটে যাবে। কেন্দ্র সব সময় খোলা আছে। বন্ধের মধ্যেও খোলা ছিল। সেবাগ্রহীতারা ঔষধ না পেলেও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন।যারা গর্ভবতী মা তারা চেকআপের জন্য আসছেন। তাদের প্রয়োজনীয় সেবা ও দেওয়া হচ্ছে।
Leave a Reply