মা ও গোলাপের দাফন মোহাম্মদ সহিদুল আলম
জেলা প্রতিনিধি,
মাগো তোমায় মনে পড়ছে প্রবাসের এ মিষ্টি বিকেলে! জানালার পাশে টবে নানান ফুলের সমাহার, ক্যামেলিয়া, অরর্কিড সহ নাম না জানা মনোমুগ্ধকর অনেক সুগন্ধি ফুলে।
মানুষ মাত্রই ফুল প্রেমি। ফুল সকলেরই প্রিয় ও ভালোবাসার। কারো বাগান ফুলে ফলে ভরা, কারোর বেলকনি, আবার কারো ড্রয়িং রুমের ফুলদানি, নানান ফুলে ভরপুর।
পৃথিবীর সব দেশেই নানান প্রজাতির ফুল রয়েছে। হল্যান্ডে টিউলিপ, বাংলাদেশে শাপলা, পদ্ম, রজনীগন্ধা তবে গোলাপ ফুলের বাগান অবনি জুড়ে।
ইউরোপের দেশগুলোতে রাস্তার ধারে নানান ধরনের গোলাপে সাজানো, মনে হয় যেন আর্ট করা।
আমাদের দিনাজপুরের বাড়িতেও বিরাট আকারের একটি গোলাপ গাছে ফুলে ফুলে ভরা, চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো।
মা রোজ গোলাপ ফুলের গাছটি দেখতেন, আর যত্ন নিতেন।
স্বপ্নের নগরী প্যারিসে বিভিন্ন স্থানে পার্কে ফুলের বাগানে গোলাপের গাছে ফুল আর ফুল, ফুলের সুবাসে মন হারিয়ে যায়, আর মাকে মনে পড়ে সব সময়! দ্বিতীয়বার গোলাপের দেশে এসেও মা চলে গেলেন না ফেরার দেশে!
আশ্চর্য ব্যাপার! ফ্রান্সে আমার বড় বোনের বাড়িতেও বিরাট গোলাপের গাছে সারাবছরই ফুল। বড়বোন মা'র মৃত্যুর সংবাদে হাসপাতালে দেখতে গেলে, বাড়ির বাগান থেকে একটি গোলাপ ফুলের স্টিক নিয়ে মা'র মাথার পাশে রেখে দেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাফনের পর মা'র মাথার পাশে ঐ একটি গোলাপ সুন্দর করে রেখে দেন। জানাজা শেষে ফ্রান্সের সরকারি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তার উপস্থিতিতে প্রশাসনিক আনুষ্ঠানিকতা সেরে মা"কে সহ কফিন বক্সে সীল মোহর করে দেন, বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য।
তখন মা'কে হারানোর শোকে কিছু ভাববার পরিস্থিতি ছিলো না! সে কষ্টের প্রকাশ সক্ষমতা আমার নেই!
বিধাতার দানে মা'র সাথে গোলাপটিও থেকে যায়। বাংলাদেশ বিমানে কফিন বক্স এলে দিনাজপুর শহরের সোনাপীর গোরস্থানে আবারও জানাজা শেষে মা'র দাফন সম্পন্ন হয়, সরাসরি মা'র কফিন বক্স৷ সাথে দাফন হয় মা ও গোলাপটিও!
রচনাকাল:
৩রা মার্চ ২০২৪ইং
কোলম্ব, ফ্রান্স।